পোশাকশিল্পের অস্থিরতা কমছে ৯৮% কারখানা স্বাভাবিক

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘আগামীকাল (আজ) দেশের সব তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানা খোলা থাকবে। কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করেন, সেটাও মনে রাখা হবে।’ তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকার কমিটি করেছে। এই কমিটির মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার যে সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে।’

শ্রম উপদেষ্টা আরো বলেন, এরই মধ্যে শ্রমিকদের জন্য কোন প্রক্রিয়ায় রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা যায় সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনের সময় যেসব মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শ্রম আইনের মধ্য থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার যতটা সুযোগ আছে, তা নিশ্চিত করবে সরকার।

শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় অনেকের মতো শ্রমিকরাও নিজেদের কথা বলছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ সমাধানে শ্রমসংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সব অভিযোগ ও দাবি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে শ্রমিকের আন্দোলনে একদমই যে ষড়যন্ত্র নেই, এমনও নয়। তবে এসব প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যারা অস্থিরতা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে।’

বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন। বলেন, ‘সরকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ায় আগামীকাল সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। তবে কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে আগামী পরশু থেকে সেই কারখানা শ্রম আইনের ১৩/১ ধারা (কাজ নেই, বেতন নেই) অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’

অন্য দেশে অর্ডার চলে যাচ্ছে জানিয়ে হামীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেছেন, ‘সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের অর্ডারগুলো প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করতে পারছেন না। বহিরাগতরা কারখানাগুলোতে অশান্তির চেষ্টা চালাচ্ছে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের মধ্যে তেমন কোনো অসন্তোষ নেই। কিছুদিন আগেই প্রায় অর্ধেক বেতন বাড়ানো হয়েছে। মালিকরা তা বাস্তবায়ন করছেন। কারখানাগুলোতে গ্যাস-বিদ্যুৎ ঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে উদ্যোক্তাদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে। অস্থিরতার কারণে বিদেশি বায়াররা আসছেন না।’

আশুলিয়ায় ৩৯টি পোশাক কারখানা বন্ধ, ১৩ টিতে ছুটি ঘোষণা

বেশির ভাগ কারখানা খোলা থাকলেও অস্থিরতার ঝুঁকি রয়েছে এখনো। এমন আশঙ্কা উদ্যোক্তাদের মধ্যে। শুক্রবার শ্রমিকদের কাজে ফেরাতে আশুলিয়ার জামগড়ায় শ্রমিক-জনতার সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহবান জানান। এর আগে বিজিএমইএতে শ্রমিক, মালিক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর যৌথ সভায় শ্রমিকদের যৌক্তিক সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।

গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, ‘সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ে সহস্রাধিক পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু কারখানায় সমস্যা হচ্ছে। যা ৫ থেকে ৬ শতাংশের বেশি নয়। জেনারেল সমস্যা থাকলে সব কারখানায় তা হওয়ার কথা ছিল। যেসব কারখানায় সমস্যা হচ্ছে ওই সব কারখানায় মালিক ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের দূরত্ব আছে, যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’

শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, ‘সাভার-আশুলিয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা ৮৬টি কারখানার মধ্যে গতকাল ৪৭টি খুলেছে। ১৩টি কারখানা আজ ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়। বাকি সব কারখানা চালু ছিল।’

কারখানা ভাঙচুরের অভিযোগে ১৯১০ শ্রমিকের নামে ৬ মামলা

শ্রমিক অসন্তোষ ঘিরে বিভিন্ন কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ বিভিন্ন সময় মোট ছয়টি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার ৯১০ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং অন্য একটি মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হলেও সংখ্যা উল্লেখ নেই। শনিবার শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

Share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *