ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি (হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস) ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন নারীর মৃত্যু ঘটেছে। সানজিদা আক্তার (৩০) নামের ওই নারী রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চিকিৎসকদের মতে, তার মৃত্যু কেবল এইচএমপিভি ভাইরাস নয়, বরং কিডনি সমস্যাসহ অন্যান্য শারীরিক জটিলতার কারণে হয়েছে।
এইচএমপিভি ভাইরাস: কী এটি?
হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) একটি শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাস, যা মূলত শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এই ভাইরাসের কারণে সাধারণত সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং নিউমোনিয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এই ভাইরাস নতুন নয়; এটি ২০০১ সালে প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশেও এর প্রতি সতর্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
মৃত্যুর কারণ:
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সানজিদা আক্তারের মৃত্যুর পেছনে এইচএমপিভি ভাইরাস সরাসরি কারণ নয়। তার কিডনির জটিলতা, ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া এবং স্থূলতা মূলত মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
একজন চিকিৎসক বলেন, “এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্তের শারীরিক অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তবে সানজিদার অন্যান্য রোগ আগে থেকেই তার শারীরিক দুর্বলতার কারণ হয়েছিল।”
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ:
এইচএমপিভি ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, ভাইরাসটির সংক্রমণ এড়াতে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার এবং জনবহুল স্থানে সতর্ক থাকা জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুরা, বয়স্করা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা এই ভাইরাসে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাদের জন্য দ্রুত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা উচিত।
দেশে সতর্কতা জারি:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার কারণে দেশে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের এই ভাইরাস চিহ্নিত করার জন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই ভাইরাসের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এইচএমপিভি ভাইরাস বাংলাদেশে নতুন হলেও, এটি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সঠিক সচেতনতা ও সতর্কতা পালনের মাধ্যমে ভাইরাসটি থেকে সুরক্ষা সম্ভব।