বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পূর্বাভাস: বিশ্বব্যাংক

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে, ২০২৩ সালের জুনে এই প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নীতি অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে এই পূর্বাভাস হ্রাস করা হয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগের সংকট

বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম গত বছরের মাঝামাঝি থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে এবং শিল্প কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া, নীতি অনিশ্চয়তা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা অর্থনীতির গতিকে আরও মন্থর করেছে।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রানীতির প্রভাব

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে মূল্যস্ফীতি কমেছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক। মূল্যস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হলেও তা এখনও লক্ষ্যমাত্রার উপরে রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জ্বালানি সংকট, সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং আমদানিতে বিধিনিষেধ শিল্পখাতকে আরও দুর্বল করেছে। এদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ায় সেবা খাতেও প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে।

রপ্তানিতে সম্ভাব্য প্রভাব

বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে গেলে দেশের রপ্তানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে বাংলাদেশ যে বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে, তার চাহিদা কমতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রভাব

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার কারণে গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কিছুটা হ্রাস করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশ্বব্যাংক আশা করছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে এটি অর্জনের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক খাতের সংস্কার, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রয়োজন হবে।

আইএমএফ-এর পূর্বাভাস ও সরকারের পদক্ষেপ

এর আগে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নামার পূর্বাভাস দিয়েছিল। এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা আগের বাজেটে ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির হার পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশকে এখন নীতি নির্ধারণ ও কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ করলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

Share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *