বিপিএল ২০২৫ এ খেলোয়াড়রা কি সময়মতো বেতন পাবে?

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ২০২৫-এর শুরুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ঘোষণা করেছিল যে, টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধের জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করতে হবে। বিসিবি জানিয়ে দিয়েছিল, টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে ৫০% বেতন, চলাকালীন সময়ে ২৫% এবং শেষের দিকে বাকি ২৫% পরিশোধ করতে হবে। তবে বাস্তবতায়, এই নিয়ম মেনে চলার ক্ষেত্রে একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

আর্থিক সংকট ও নিয়ম অনুসরণের সমস্যা

বিপিএল ২০২৫-এর পূর্বে বিসিবি যে নিয়ম ঘোষণা করেছিল, তা কার্যকরী করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য এটি কঠিন হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি ফাইন্যান্সিয়াল কন্ডিশন এবং অন্যান্য শর্তের কারণে খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধের নির্ধারিত সময়সীমা মেনে চলতে পারছে না। বিশেষ করে, ঢাকা ডমিনেটরস, চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স, খুলনা টাইটানস এবং রাজশাহী রাইডার্স এই নিয়ম মানতে পারছে না। এই দলগুলো বাজেট ও আর্থিক সংকটের কারণে খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধে বিলম্ব করছে।

এছাড়া, বরিশাল বুলস এবং সিলেট স্ট্রাইকার্স দলগুলোর মধ্যেও দেখা যাচ্ছে যে, তাদের আর্থিক সমস্যা এবং স্পনসরশিপের অভাবে বেতন পরিশোধে কিছু বিলম্ব ঘটছে। এই দলগুলোর খেলোয়াড়রা তাদের বেতন নিয়ে উদ্বিগ্ন, যা তাদের খেলার পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আরও একটি দিক: স্পনসরশিপ এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ

এবারের বিপিএল-এর অন্যতম বড় সমস্যা হলো স্পনসরশিপের ঘাটতি। কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি, আর্থিক অস্থিরতা এবং সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য ক্রীড়া টুর্নামেন্টের চাপের কারণে বিপিএল-এর স্পনসরশিপের পরিমাণ কমেছে। এই সমস্যা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, যারা তাদের আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী খেলোয়াড়দের বেতন দিতে পারছে না। বিশেষ করে, ঢাকা ডমিনেটরস এবং চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স মতো বড় দলগুলোও স্পনসরশিপের ঘাটতির কারণে তাদের অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়েছে।

এছাড়া, বিপিএল-এর স্নিগ্ধ রেটিং এবং দর্শকসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর পক্ষে পুরোপুরি খেলোয়াড়দের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিসিবির পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা

বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই পরিস্থিতি সমাধানে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। বিসিবি ইতোমধ্যে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে এবং তাদের কাছে ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। তবে, বিসিবি বলেছে যে, খেলার গুণগত মান এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য এই নিয়মগুলো পরিবর্তন করা হবে না।

বিসিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিপিএল-এর জন্য নতুন নিয়ম ও নীতি চালু করা হবে যা আর্থিকভাবে শক্তিশালী এবং খেলোয়াড়দের প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণে সাহায্য করবে। তারা আরও জানায়, বিপিএল-এ সঠিকভাবে অর্থপ্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক মানের চুক্তি এবং নিয়মের প্রবর্তন করতে হবে, যা ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

বিপিএল খেলোয়াড়দের আশাবাদ

এদিকে, বিপিএল ২০২৫-এর খেলোয়াড়রা আশা করছেন, তাদের বেতন সঠিক সময়ে পরিশোধ করা হবে এবং তারা খেলায় মনোযোগ দিতে পারবেন। শীর্ষ ক্রিকেটাররা জানিয়েছেন যে, তারা তাদের পারফরম্যান্স নিয়ে উদ্বিগ্ন নন, তবে বেতন পরিশোধে কোনো ঝামেলা না হলে তাদের মনোবল আরও শক্তিশালী হবে।

বিপিএল ২০২৫-এর ভবিষ্যৎ এবং চ্যালেঞ্জ

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিপিএল ২০২৫-এর চলমান আর্থিক সংকট ও ফ্র্যাঞ্চাইজির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন টুর্নামেন্টের সামগ্রিক উন্নতির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া, বিপিএলের ব্র্যান্ডিং এবং স্পনসরশিপ সম্পর্কিত সমস্যা ভবিষ্যতে আরও জটিল হতে পারে।

তবে, বিপিএল-এ অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়, কোচ এবং দর্শকদের আশা, বিসিবি দ্রুত এ সমস্যাগুলোর সমাধান করবে এবং টুর্নামেন্টের গুণগত মান বজায় রেখে বিপিএল ২০২৫ কে আরও সফল করে তুলবে।

Share this article

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *