ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি: জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ভবনের সামনে গতকাল একটি বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়, যেখানে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আদিবাসী ছাত্র-জনতা ও “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি” গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে এই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা এখন জাতীয় পর্যায়ে আলোড়ন তুলেছে।
নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্র বইয়ের পিছনের প্রচ্ছদে “আদিবাসী” শব্দটি রাখা বা বাতিল করার বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। প্রতিবাদকারীদের মধ্যে আদিবাসী ছাত্র-জনতা লাঠিসোঁটা হাতে আক্রমণের শিকার হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
বিক্ষোভ এবং জাতীয় প্রতিক্রিয়া
“আদিবাসী” শব্দের অন্তর্ভুক্তি বা অপসারণ নিয়ে এনসিটিবি ভবনের সামনে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, উত্তেজনা দ্রুতই সহিংসতায় রূপ নেয় এবং এতে অনেকেই আহত হন। আহতদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই সংঘর্ষের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলো তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নিন্দা জানিয়েছে। এছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভের আয়োজন করেছে।
ঢাকা পোস্ট জানিয়েছে, সংঘর্ষের সময়কার পরিস্থিতি এবং আহতদের পরিচয় প্রকাশ করেছে। স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি এবং আদিবাসী ছাত্র-জনতা উভয় পক্ষই নিজেদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছে। ঢাকা পোস্ট আরও জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
জাগো নিউজ ২৪ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে বিরোধের জেরে এই সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে লাঠিসোঁটা নিয়ে আক্রমণের ফলে আহতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই হামলাকে “কাপুরুষোচিত এবং বিভাজনমূলক” আখ্যা দিয়ে কড়া নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিবৃতিতে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়। তারা এই ঘটনাকে জাতিগত বিভাজন জিইয়ে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি”-কে দায়ী করেছে। তারা জানায়, “যদি পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করত, তবে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটত না।”
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিবৃতি
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি অঙ্কন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা এক যৌথ বিবৃতিতে দাবি করেন, “উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির প্ররোচনায় এই হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন।
তারা আরও জানায়, হামলাকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি দিয়েছিল এবং সকালে এনসিটিবি ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পিসিপি নেতারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “অবস্থা শান্ত রাখতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
এই ঘটনার পর দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতিবাদকারীদের নিরাপত্তা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে, এবং অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জোরালো হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, এই ধরনের ঘটনা দেশের বিদ্যমান জাতিগত ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কার্যক্রমের দিকে সবার নজর।